বই উৎসবের মধ্য দিয়ে সারাদেশের মতো নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেল রাঙামাটির ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। বাংলাভাষীদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা পেয়েছে মাতৃভাষায় লেখা বই। আজ রবিবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় জেলা শহরের বনরূপা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসব উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী।
তিনি বলেন, বছরের প্রথমদিনে শিশুদের হাতে হাতে বই পৌঁছাতে পারছি, সেজন্য আমরা গর্ববোধ করছি। পাশাপাশি আমাদের তিন পার্বত্য জেলার চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুদের মাতৃভাষায় বই দেয়া হচ্ছে৷ এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, মাতৃভাষায় বই পেলেও এখনো তাদের পাঠক্রম পদ্ধতি চালু হয়নি। এটা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা এর মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, মাতৃভাষার শিক্ষায় পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়টি এখনো আমাদের গাইডলাইনে আসেনি। এটি নিয়ে আলোচনা করে গাইডলাইন মোতাবেক পরীক্ষাপদ্ধতি চালু করা যায় কিনা সেটি আমরা দেখছি।
ডিপিইও কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর পুরো জেলায় সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৮৯ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫২৯টি বই বিতরণ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, পাহাড়ি শিশুদের মাঝে মাতৃভাষায় বই বিতরণ কার্যক্রমে জেলার চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ২৯ হাজার ৮০৬ শিক্ষার্থীকে ৬৭ হাজার ৭৫০টি মাতৃভাষার বই দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চাকমা ভাষার বই দেয়া হচ্ছে ৫৩ হাজার ২২৪টি, মারমা ভাষার বই দেয়া হচ্ছে ১০ হাজার ৮২১ ও ত্রিপুরা ভাষার বই দেয়া হচ্ছে ৪ হাজার ১০১টি। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা তিন ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের প্রাক-প্রাথমিকে দুটি বই, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে তিনটি এবং তৃতীয় শ্রেণীতে একটি করে বই থাকবে। তবে জনসংখ্যাগত দিক দিয়ে রাঙামাটি জেলায় মারমা ও ত্রিপুরাদের চেয়ে চাকমাদের বসবাস বেশি হওয়ায় এ নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরাই বেশি বই পাচ্ছেন।
২০১৭ সালে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সে বছর থেকে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, এবং সাদ্রি- এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ শুরু হলেও তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষী শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক থেকে বই পাচ্ছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণী, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণী ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণীতেও মাতৃভাষায় বই পেয়েছে তারা।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, কেবল তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা। তবে পাহাড়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী বসবাসরত করলেও তাদের সন্তানেরা মাতৃভাষায় পড়তে পারছেন না।
তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা
Leave a Reply